ইসরাইলের যুদ্ধবিমানগুলো যখন ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনার দিকে উড়ে যাচ্ছিলো, তখনই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে ইরানের ভেতরে লুকিয়ে থাকা মোসাদের ছদ্মবেশী সশস্ত্র গোয়েন্দা দল, একঝাঁক সশস্ত্র ড্রোন এবং সাধারণ যানবাহনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা বিস্ফোরক।
সব মিলিয়ে হামলা হয় ঘুমন্ত গুরুত্বপূর্ণ সব ব্যক্তি ও স্থাপনার ওপর। কোনো রকম নিরাপত্তা নেয়ার সুযোগও পাননি ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা। কিছু বুঝার আগেই নিজ দেশের মধ্যেই লুকিয়ে থাকা ইসরাইলি গুপ্তচরদের হাতে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হয় ইরানের সেনাপ্রধান থেকে শুরু শীর্ষ ছয় কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীকে।
কয়েক দশক ধরেই ইরানে হামলার হুমকি দিয়ে আসছে ইসরাইল। অবশেষে গত ১৩ই জুন গভীর রাতে হামলা হয়। ঘুমন্ত ইরানি সামরিক কমান্ডার, পরমাণুবিজ্ঞানী এবং অভিজাত বাহিনী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের প্রধানরা ছিলেন লক্ষ্যবস্তু। নাম দেয়া হলো অপারেশন রাইজিং লায়ন।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফি ডেফরিন বলেন, তেহরান পর্যন্ত পৌঁছানোটা উচ্চ পর্যায়ের কৌশলগত ও কার্যত সাফল্য ও গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা ও বিমান বাহিনী সম্মিলিতভাবে কয়েক বছর ধরে পরিকল্পনা করে অবশেষে সফল হয়েছে। ইসরাইলের মানুষকে রক্ষায় যা যা দরকার, সব আমরা করবো। তেহরান আর সুরক্ষিত নেই। ওদের রাজধানী আর সন্ত্রাসী সংস্থাগুলো ইসরাইলের হামলায় কাবু।
ইরানে হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ভার পড়েছিলো ইসরাইলের দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ওপর। তারা কয়েক বছর ধরে ইরানি নেতাদের অবস্থান ও তথ্যসংবলিত ফাইল তৈরি করেছে। এর মধ্যে তাদের বাসা, বাংকার, গোপন আশ্রয়স্থলের তথ্যও ছিলো।
সম্প্রতি খোলা জায়গায় নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্র স্থাপন করে ইসরাইল। বিশেষ করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যাটারি কাছাকাছি এসব অস্ত্র বসানো হয়।
এর উদ্দেশ্য ছিলো, হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় করে ফেলা। এছাড়াও আগে থেকেই ইরানের ভেতরে বিস্ফোরক ড্রোনের একটি ঘাঁটি গড়ে তোলে মোসাদ। হামলার আগে এসব ড্রোন সক্রিয় করা হয়।
ইসরাইলি যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতে পারে এমন সব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় করতে সাধারণ যানবাহনের ভেতরে বিস্ফোরক ও উন্নত প্রযুক্তি লুকিয়ে রেখেছিলো মোসাদ। এসব গোয়েন্দা ও অস্ত্রশস্ত্র সপ্তাহ কিংবা মাসের পর মাস ইরানের ভেতরেই নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিলো।
আগে থেকেই হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছে স্বীকার করলেও অস্ত্রগুলো মোসাদ কীভাবে ইরানে পাচার করেছিলো, সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা দেননি ইসরাইলি কর্মকর্তারা।
Reviewed by Admin
on
June 18, 2025
Rating: 5

No comments: